এখন আমার গ্ল্যামার দরকার নেই
পপি |
মিডিয়াতে পথচলা শুরু হয়েছে কতো সালে এবং কিভাবে?
১৯৯৫ সালে লাক্স ফাস্ট ফটোসুন্দরী হওয়ার পর থেকেই আসলে মিডিয়াতে পথচলা শুরু হয়েছে। এর পর মডেলিং, বিজ্ঞাপন, টিভি নাটক দেন ফিল্মে কাজ শুরু করি। টানা দুই বছর নাটক এবং বিজ্ঞাপনের কাজ করে ১৯৯৭ সালে মনতাজুর রহমান আকবরের ‘কুলি’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শুরু হয় আমার ফিল্মের যাত্রা।
এ পর্যন্ত কতোটা ছবিতে অভিনয় করেছেন?
প্রায় দুইশত চলচ্চিত্রে কাজ করেছি।
আপনাকে চলচ্চিত্রের পাশাপাশি নাটকেও অভিনয় করতে দেখা যাচ্ছে। নিয়মিত হবেন কি?
আমি আগেই বলেছি আমার অভিনয়ের শুরু হয়েছে মডেলিং, বিজ্ঞাপন এবং নাটক দিয়ে। আমি আমার কাজকে কখনোই ছোট পর্দা বা বড় পর্দার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখিনি আর রাখতেও চাই না। আমি একজন আর্টিষ্ট। আর একজন আর্টিষ্টের কাজ হচ্ছে ভালভাবে অভিনয় করা। সেটা হোক বড় পর্দা অথবা ছোট পর্দা। অমি অভিনয়ের কাঙ্গাল বলতে পারেন। যেখানে আমার ভাল অভিনয়ের সুযোগ থাকবে সেখানে আমি কাজ করবো। বড় পর্দা ছোট পর্দার কোনো ভেদাভেদ নেই আমার কাছে। আরেকটা জিনিস আমি সবসময়ই মাথায় রাখি সেটা হলো আমাদের টিভির কিছু দর্শক আছেন যারা সিনেমা হলে গিয়ে টিকেট কেটে সিনেমা দেখেন না। ঘরে বসেই টিভি নাটকগুলো দেখেন। তাদের কথা মাথায় রেখেই কিন্তু আমার এই কাজগুলো করা।
অভিনয়ের পাশাপাশি কি করেন?
আমি আসলে অভিনয় ছাড়া আর কোনো কাজ বুঝিও না, জানিও না, করিও না। এখন বলবেন আপনি একটা মেয়ে। মেয়েদের তো অনেক কাজ করতে হয় ঘরের? সেক্ষেত্রে বলবো ঘরের এমন কোনো কাজ নেই যেটা পপি না পারে।
সহশিল্পী হিসেবে অনেকের সঙ্গেই আমরা দেখেছি আপনাকে। বিশেষ কেউ কি ছিল যার সঙ্গে কাজ করতে আপনার একটু বেশি ভাল লাগতো বা কেমেষ্ট্রিটা দুজনেরই মিলে যেত?
আমাকে যারা ভালবাসেন, আমার অভিনয় যারা পছন্দ করেন তাদের পছন্দেই আসলে সহশিল্পী হিসেবে অনেকের সঙ্গে কাজ করা হয়েছে আমার। আর সবাইকেই দর্শক অনেক পছন্দ করেছে। সবার সঙ্গেই কাজ করতে আমার ভাল লেগেছে।
কোন ধরনের চরিত্রে আপনি অভিনয় করতে পছন্দ করেন?
আমার এখনো অনেক কাজ করতে হবে। কাজের কোনো শেষ নেই। সারা বিশ্বে নারীপ্রধান যেসব চরিত্র গুলো আছে। বা যেসব নারীপ্রধান চরিত্রে চলচ্চিত্র নির্মাণ করা হয় সব গুলো চরিত্রেই আমি নিজেকে পর্দায় উপস্থাপন করতে চাই। লিড যে চরিত্র গুলো আছে সে গুলোতে কাজ করতে চাই। সাহিত্য নির্ভর ছবিতে কাজ করতে চাই। শ্রমজীবি মানুষদেরকে নিয়ে যে সব ছবি নির্মাণ করা হয় সেগুলোতে আমি কাজ করতে চাই। এই ধরনের চরিত্রে আমি কখনো কাজ করিনি। আর করতেও চাই বললে ভুল হবে না। এর পরে বলবো শুধু নাচ গানের মধ্য দিয়ে যেসব ছবি শেষ করা হয় সেগুলোতে আমি কাজ করতে চাই না। আমি একটু চ্যালেঞ্জিং গল্প পছন্দ করি। গল্পের মধ্যে নিজেকে প্রমাণ করা যায়। নিজের দক্ষতাকে শতভাগ মেলে ধরা যায় ওই সব গল্পে কাজ করতে চাই।
আপনিতো জীবনের অনেকটা সময় চলচ্চিত্রে পার করেছেন। আপনার এই অভিজ্ঞতা থেকে জানতে চাই বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের এখনকার অবস্থা কেমন মনে হচ্ছে আপনার কাছে?
আসলে সারা পৃথিবীতে ফিল্ম ইন্ড্রাষ্টি যে পরিমাণে এগিয়ে গিয়েছে তার তুলনায় আমাদের দেশ অনেক পিছিয়ে আছে বললে একদমই ভুল হবে না। টেকনিক্যাল সাইড বলেন আর মেকিং সাইডই বলেন প্রত্যেকটা সাইডই অনেক দুর্বল অবস্থায় আছে আমাদের দেশে। এখন আবার কিছু কিছু ছবি আনেক ভাল হচ্ছে। আশা করছি বাংলাদেশের ফিল্মও একদিন পৃথিবীর বুকে মাথা উচুঁ করে দাঁড়াবে ইনশাআল্লাহ।
আপনি যখন চলচ্চিত্রে পা রেখেছিলেন তখন তো এনালগ ছিল। বর্তমান প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে এটা সম্বন্ধে কি বলবেন? ডিজিটাল চলচ্চিত্র সম্বন্ধে কি বলার আছে?
ডিজিটাল কথাটা শুনতে অনেক ভাল লাগে কিন্তু সত্যিকার অর্থে কি ডিজিটাল হচ্ছে সেটা দেখার বিষয়। আমার ডিজিটাল মুভি সম্মন্ধে একটু বোঝার দরকার আছে। কারণ ডিজিটাল মুভিটা কি সেটাই আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না। আমি যেটা জানি সেটা হলো ডিজিটালে শুট করলেও সেটা আবার থার্টি ফাইভে কনভার্ট করে কালার কারেকশন করে। এবং অন্যান্য অনেক কিছু করার পরে দেন একটা ছবি দর্শক প্রেক্ষাগৃহে দেখতে পায়। এখন ডিজিটালের নামে আমাদের দেশে সস্তা কিছু ছবি বানানো হচ্ছে যেটার জন্য বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের আরো অনেক বড় একটা ক্ষতি হচ্ছে বলে আমি মনে করি। আমি বলবো একটা কাপড় বানানোর জন্য একটা টেইলর অনেক এনালাইসিস করে বানিয়ে থাকেন। সেখানে যদি আপনি মাদবারি করে দুই হাতার জায়গায় তিনটা হাতা দেন তাহলে
সেটা ভাল হবেনা আগের চেয়ে খারপ হবে বলেন তো একটু? ডিজাইন চেঞ্জ হতে পারে তাই বলে তো আর বেসিকটা চেঞ্জ হয় না। আমাদের দেশের কিছু মাদবার পরিচালক হয়েছে যারা চলচ্চিত্রের বেসিকটাই চেঞ্জ করে ফেলেছে। এটাই হয়েছে আমাদের দেশের চলচ্চিত্রের অবস্থা। এক কথায় বলবো মাদবারি আনেক অংশে বেড়ে গিয়েছে চলচ্চিত্রে। কিন্তু কাজের সময় কিছুই হচ্ছে না।
এখন ইন্ড্রাস্ট্রিতে অনেকের মুখেই শোনা যাচ্ছে বা আমরা নিজেরাও দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন দেশের চলচ্চিত্র আমাদের দেশে কপি করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আপনার মন্তব্য কি?
কপি যিদ সুন্দর মতো করতে পারে অবশ্যই সেটা খারাপ না। খারাপ বলারও কোনো অবকাশ নেই। আমাকে যদি বলেন কপির পক্ষে না বিপক্ষে কথা বলবেন আপনি?? তাহলে বলবো আমি কপির পক্ষেও না আবার বিপক্ষেও না। কারণ কপিটা যদি সুন্দরভাবে প্রেজেন্টেবল করতে পারে তাহলে সেটা অবশ্যই করা উচিত। আর যদি কপি করতে গিয়ে দেশের ঐতিহ্যকে একেবারেই ভুলে যান তাহলে তো বলবো আপনাকে সারা জীবনের জন্য দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত। আগে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখে পরে বোনাসটা নিয়ে টানাটানি করা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে এখন বোনাসটারই অনেক গুরুত্ব পাচ্ছে।
যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে নায়িকাদের একটু খোলামেলা পোশাকে নিজেদেরকে পর্দায় উপস্থাপন করতে হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য যানতে চাই?
এটা যার যার রুচির উপরে ডিপেন্ড করে। গল্প অনুযায়ী কোনো নায়িকাকে যদি একটু খোলামেলা পোশাকে দেখানো হয়। আর ওই গল্পের সঙ্গে যদি নায়িকাটা নিজেকে ক্যারি করতে পারে তাহলে সেটা করবে। এতে খারাপ কিছুই তো দেখছি না। সেটা গল্পের ডিমান্ড এবং রুচির ডিমান্ডের উপরেই আসলে নির্ভর করে। তাই বলে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে অভিনয় করাটা আমি ভালভাবে দেখছি না। আগে নিজের সম্মান পরে গিয়ে ক্যারিয়ার।
এর আগে আপনাকেও দর্শক কমার্শিয়ালভাবে পর্দায় দেখেছে। আবারো কি পপিভক্ত দর্শকরা সেভাবে দেখতে পাবে কোনোদিন পপিকে?
গল্পের ডিমান্ডে হয়তো কিছু দৃশ্যে আমাকেও দেখতে পেয়েছে দর্শক। আগেই বলেছি আমি অভিনয়ের কাঙ্গাল। আর চরিত্রের প্রয়োজনে হয়তো দর্শক একটু খোলামেলা পোশাকে দেখেছে আমাকে। কিন্তু সম্মানটুকু নষ্ট করে দেইনি একেবারে। আর ভবিষ্যতের কথা বলতে গেলে একই কথা বলবো-চরিত্রের প্রযোজনে যদি নিজেকে উপস্থাপন করতে হয় তাহলে সেটা পপি অবশ্যই করবে।
ভারতীয় চলচ্চিত্রে এখন অনেকেই আইটেম সংয়ের মাধ্যমে অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। আপনার কি এরকম কোনো ইচ্ছা আছে?
এর আগে কখনো আমি করিনি। তবে গল্পের প্রয়োজনে যদি আমাকে আইটেম সংয়ে পারর্ফাম করা লাগে তবে সেটাও আমি করবো। আর আইটেম সং মানেই কিন্তু কাপড় খোলা সেটা কিন্তু না। আইটেম সংয়ের মাধ্যমে ভারতীয় ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রির উন্নতির কারণ হলো তারা এটাকে নোংরাভাবে দেখে না। বা নোংরাভাবে আইটেম গার্লদেরকে উপস্থাপন করে না। যতটুকু করলে ভাল হয় দর্শক পছন্দ করে তারা ঠিক সেটুকু করে। আমাদের দেশে কিন্তু সেটা হচ্ছে না। পুরাই উল্টো। আমি করবো না সেটা ঠিক না। ভাল কিছু হলে অবশ্যই করবো।
যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্রকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
এটার ভাল দিকটাই মনে হয় বেশি আছে। কারণ হলো দুই শক্তি কাজে লাগিয়ে একটি ভাল চলচ্চিত্র দর্শকদেরকে উপহার দেওয়া যায়।
গ্ল্যামারাস পপিকে দর্শকেরা আবারো কি ফিরে পাবে?
এখন আমার গ্ল্যামার দরকার নেই। এখন আমার ভাল ছবি ভাল গল্প দরকার। আর গ্ল্যামার যেটা আছে সেটা এনাফ। দর্শকদের জন্য এখনো আমি পপি অনেক কষ্ট করে যাচ্ছি। আশা করছি তাদেরকে আগের মতোই ভাল ভাল কাজ উপহার দিতে পারছি। এখন আমার যে গ্ল্যামার রয়েছে এটাকে নির্মাতারা ভালভাবে কাজে লাগাতে পারলে আমি মনে করি ভাল কিছুই আসবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে।
তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবার পরও কেনো আগের মতো নিয়মিত হচ্ছেন না?
আগে বছরে প্রায় এক থেকে দেড়শত ছবি রিলিজ হতো। তার তুলনায় এখন কতোটা ছবিটি রিলিজ হচ্ছে? আগে আমাদের দেশে আর্টিষ্ট ছিল হাতেগোণা কয়েকজন। আর এখন যেখানে যাবেন সেখানেই আর্টিষ্ট পাবেন। তো সব মিলিয়ে হিসেব করতে গেলে দেখবেন আমি নিয়মিতই কাজ করছি। অনিয়মিত নই। আর তার থেকেউ বড় কথা হলো আমাদের ইন্ড্রাস্ট্ররই কাজ কম। আমাদের নয়। ইন্ড্রাস্টির যদি কাজ বেড়ে যায় তাহলে আমাদের কাছেও কাজ বেড়ে যাবে এটা নিঃসন্দেহে বলেতে পারি। তার পরেও আবার আরেকটা কথা রয়েছে কাজের অফার আসেনা না তা ঠিক নয়। প্রতিদিনই কিছু না কিছু কাজের অফার আসছে কিন্তু সব কাজই তো কাজ নয় এটাও চিন্তা করতে হবে। কাজের তো মান থাকতে হবে। নিজের অতীত চিন্তা করে বর্তমানে অনেক হিসাব করেই কাজে চুক্তিবদ্ধ হতে হয়। আমি আগেই বলেছি ভাল গল্প হলে আমি সেটা গ্রহণ করি। না হলে করি না। এখন যে সব অফার আসছে সেগুলো মানসম্মত নয়। যার কারণে হয়তো একটু কমই দেখছেন পর্দায়। তবে আশা করছি আবারো কিছুদিনের মধ্যে আগের মতোই দেখতে পাবেন ইনশাআল্লাহ।
আপনার কথা মতে আগে বছরে এক থেকে দেড়শত ছবি রিলিজ পেত এখন সেটা পাচ্ছে না। এটার কারন সম্মন্ধে যদি কিছু বলতেন?
এই কারণটা আসলে ফিল্মে যারা বড় বড় বোদ্ধা আছেন তারা বলতে পারবেন। যারা প্রতিনিয়ত ফিল্ম নিয়ে এনালাইসিস করেন। আমি ফিল্মের ছোট একটি আর্টিষ্ট মাত্র। তবে আমার কাছে মনে হয় যে আমাদের দেশের সিনেমা হলের পরিবেশ ঠিক নেই। কারণ আপনি খুব ভাল বিরিয়ানী রান্না করলেন কিন্তু কাউকে দাওয়াত দিলেন না। আবার দাওয়াত দিলেন কিন্তু আপনার প্লেটের পরিবেশন ভাল না। তো আপনি যতই ভাল বিরিয়ানী রান্না করেন না কেনো আপনার প্লেটটা যদি ভাল না হয় খাবারের পরিবেশটা যদি ভাল না হয় তাহলে ওইটার ভ্যালু হচ্ছে জিরো। তো আপনি খুব ভাল একটা ছবি বানালেন রিলিজের পরে ছবিটা দেখার পরিবেশ নেই তাহলে তো ঐ বিরিয়ানীর মতোই ছবিটির রেজাল্ট জিরো হবেই, তাই না? আর আমরা যারা চলচ্চিত্রে ইনভেস্ট করছি তারা প্রোপার ইনভেস্ট কি করছি? যদি করতাম তাহলে হয়তো এর থেকেও ভাল কিছু আশা করতে পারতাম। সব চেয়ে বড় উদাহরণ হলো বাংলাদেশের সিনেপ্লেক্স। সেখানে গিয়ে দেখেন তো কোনো শোতে একটা সিট খালি থাকছে নাকি। এরকম সিনেমা হল যদি বাংলাদেশের প্রতিটি শহরেই থাকতো তাহলে ফিল্মের এই দুর্গতি হতো না এটা আমি শতভাগ নিশ্চিত এবং গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। আরো একটি বিষয় আছে যেটা না বললেই নয়। আমাদের দেশে যারা ফিল্ম মেকিং করছেন তারা কি প্রোপার মেকিং করতে পারছেন? এটাতেও আমার আপত্তি আছে। শুধু মেকিংই নয় প্রতিটি স্থরেই সমস্যা আছে। ক্যামেরাম্যান থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের প্রত্যেকটা স্থানেই অদক্ষ জনবল কাজ করছে। এভাবে কাজ করলে কি ভাল কিছু আশা করা যায়? এখন যারা একটি ফিল্মের পিছনে কাজ করে পরিপূর্ণ ফিল্মটা তৈরি করছে তাদের থেকে হাজার গুণে অ্যাডভান্স হয়ে গিয়েছে দুনিয়া। তাদেরকে আরো অনেক কিছু শিখতে হবে।
প্রতিদিন কোন ধরনের কাজের অফার পাচ্ছেন সেটা নিয়ে যদি কিছু বলতেন?
সস্তা শব্দের সঙ্গে পরিচিত আছেন? ওই সব সস্তা কাজের অফার আসছে। যার জন্য কাজ করা হয়ে উঠছে না। আমি তো সস্তা আর্টিষ্ট নারে ভাই যে প্রতিদিন কেউ না কেউ সস্তা সব কাজের অফার দেবে আর আমিও টপ করে গিলে ফেলবো। বাংলাদেশ চলচ্চিত্রে আমার একটা শক্ত স্থান রয়েছে। আর এই স্থানটা ধরে রাখতে হলে অবশ্যই আমার অনেক বিবেচনা করেই কাজ করা উচিত। আমি সেটা করছি মাত্র। এর মধ্যে ভাল যেসব কাজের অফার পাচ্ছি সেগুলো করছি আর বাকিগুলো ডাষ্টবিনে ফেলছি।
ডিজিটাল যুগের চাহিদা মতে আপনি নিজেকে কতোটুকু প্রস্তুত বলে মনে করেন?
আমি যখন ফিল্মে কাজ শুরু করেছি এবং এটাকে যখন থেকে প্রফেশন হিসেবে বেছে নিয়েছি তখন থেকে আজ পর্যন্ত নিজেকে প্রেজেন্টেবল করেই কাজ করছি বা ভবিষ্যতেও করবো। দর্শকদের চাহিদা যদি মেটাতে না পরতাম তাহলে হয়তো আমি এতোটা সময় এখানে পার করতে পারতাম না। বুঝতেই পারছেন কি বলতে চাইছি?
আপনি যখন একটা চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন তখন ওই চলচ্চিত্রের কোন কোন দিকটা দেখে চুক্তি স্বাক্ষর করেন?
সুন্দর একটা প্রশ্ন। আমি যখন একটা চলচ্চিত্রে কাজ করি তখন প্রথমেই দেখি গল্প। দেখি ছবিটি পরিচালনা করছে কে। দেখি ছবিটা নির্মাণ করতে কতো টাকা ইনভেস্ট করবে প্রযোজক। সে কি আসলেই ইনভেস্ট করতে পারবে কি না। এর পরে দেখি ছবিটির কাস্টিং। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তারপর একটা চলচ্চিত্রের কাজ শুরু করি। আরো কিছু জিনিস দেখা হয় সেটা হলো যিনি ছবিটা প্রযোজনা করবেন তিনি ঠিক ভাবে মার্কেটিং করবে কি না।
এখন দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন আর্টিষ্ট যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কাজ করছে। এটাকে কিভাবে দেখছেন?
আমি আসলে নিজেকে বাংলাদেশী শিল্পী হিসেবে প্রেজেন্ট করতে পছন্দ করি। তা না হলে এতো বড় বড় সুযোগ থাকার পরও কিছু কিছু কাজ আমি রিফিউজ করেছি। শুধু কলকাতায় নয় বোম্বে থেকে আমার কাছে অনেক কাজের অফার এসেছে। এমনও হয়েছে আমি বোম্বের ছবিতে কাজ করবো। সেখানে ছয় মাস আমাকে থাকতে হবে ট্রেনিংয়ের জন্য। তখন আমি এ সব অফার গ্রহণ করিনি। কারণ ছিল দেশ ছেড়ে ছয় মাস যদি আমি বোম্বে থাকি তাহলে বাংলাদেশে ভাল মানের দুইটি ছবি দর্শক দেখতে পাবে না। এটা আমি কখনোই চাইনি। তবে এখন মনে হয় ভাল কোনো অফার আসলে অবশ্যই কাজ করা উচিত। এখন যারা কাজ করছে তাদেরকে অবশ্যই ছবিটি পরিপূর্ণ যৌথ হচ্ছে কি না সেটার দিকে লক্ষ রাখা উচিত। দেশের গুরুত্ব কতোটুকু থাকছে ছবিটিতে সেটার দিকেও লক্ষ রাখা দরকার। এখন আমার কাছেও অফার আসছে। ভাল কিছু হলে অবশ্যই দুই বাংলার ছবিতে কাজ করবো। যদি এমন হয় যে পপির চেহারা দেখানোর জন্য শুধুমাত্র কাজে নিতে চাই হলে আমি ওই কাজ করতে চাই না। আর যদি কাজটাতে আমার গুরুত্ব আমার দেশের গুরুত্ব থাকে তাহলে অবশ্যই আমি কাজটা করতে চাই।
আপনি এখন পর্যন্ত ভবিষ্যত জীবনের জন্য সঙ্গী হিসেবে কাউকে গ্রহণ করেননি। কবে করবেন?
আমি আসলে এখন আমার কাজ নিয়েই অনেক বেশি ব্যস্ত। আরো কিছু ভাল কাজ করতে চাই। বিয়ের ডিসিশন, সংসার জীবনের ডিসিশন অনেক বড় একটা ডিসিশন। এটার জন্য অনেক সময় দরকার যে সময়টা আমি কাজের বাইরে বের করতে পারছি না। আর আমি যখন বিয়ে করবো তখন হান্ড্রেড পারসেন্ট সময় আমার সংসারকেই দেব। তখন আমি ফিল্ম নিয়ে মাথা ঘামাবো না। বলতে পারেন আমি যখন যে কাজটা করি সেটা হান্ড্রেড পারসেন্ট মনযোগ দিয়েই করি। যেমন আমি এখন ফিল্ম করছি আমার পুরোটা সময় ফিল্মকেই দিতে চাই। বিয়ের পরে স্বামী সংসার ছাড়া অন্য কিছু চিন্তাও করতে চাই না। তাই আরো কিছু কাজ করে তারপর বিয়ের কথা চিন্তা করবো। আর প্ল্যানিং বলে আমার জীবনে কিছু নেই। বলতে গেলে এভাবেই বলতে হয় আমার মন মতো যতোদিন কাউকে না পাচ্ছি ততদিন বিয়ের চিন্তা করছি না।
অনেকটা সময় মিডিয়াতে পার করলেন। মিডিয়ার কাউকে কি জীবনসাথী করার ইচ্ছা আছে?
আমার ভাল লাগার মানুষটা যেকোনো প্রফেশনের হতে পারে। যেকোনো স্থানেরই হতে পারে, যে কোনো দেশেরই হতে পারে। নিদিষ্ট কোনো প্রফেশন ঠিক করা নেই যে এই প্রফেশনের একটি মানুষকে আমার জীবন সাথী করতে হবে। এখানে কাজ করছি বলে এখানেরই কাউকে বিয়ে করতে হবে এমন কোনো কথাও আবার নেই। তবে হলে সমস্যা নেই।
No comments
https://web.facebook.com/Newprojapotibd/