ক্যারিয়ারে লম্বা বিরতির পর আবারো চলচ্চিত্রের ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে যাচ্ছেন বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী "রেসি"
২০০৪ সালে বুলবুল জিলানীর ‘নীল আঁচল’ ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে পা রেখেছিলেন জনপ্রিয় নায়িকা রেসির। মাঝখানে সংসার বেঁধেছেন এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। সংসার গোছাতে কিছুটা সময় মিডিয়া থেকে দুরে থাকতে হয়েছে তাকে। আবারো তিনি নিয়মিত হয়েছেন অভিনয়ে। রেসির মুখোমুখি হয়েছেন সবুজ পারভেজ
ক্যারিয়ারে লম্বা বিরতির পর আবারো চলচ্চিত্রের ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে যাচ্ছেন। এতোটা বিরতি নিয়েছেন কেন। নতুন এই ছবিটি সম্বন্ধে জানতে চাই।
আমার ক্যারিয়ারে দুই বছর গ্যাপ গিয়েছে বিয়ের কারণে। এর মাঝে একটা বেবীও হয়েছে। এ সব কারণেই আসলে মাঝখানের কিছু সময় কাজ করা হয়নি। এরপর নিজেকে তৈরি করারও একটি বিষয় ছিল। ভাল গল্প পাওয়ারও একটা বিষয় ছিল। আমি আসলে বরাবর যে ধরণের গল্পের ছবি করেছি মাঝে সে ধরনের গল্পের ছবিও হচ্ছিল না। এটার কারণেও কিছুদিন অপেক্ষা করেছি বলতে পারেন। যেমন আমি আগে যেসব ছবি করেছিলাম ‘আমার স্বপ্ন আমার সংসার’, ‘এক জবান’, ‘কাজের মানুষ’, ‘ছোট সংসার’, এই ধরনের গল্পের ছবি মাঝখানে বন্ধ হয়ে গেল, যার কারণে কিছুটা সময় দূরে ছিলাম বলতে পারেন। এখন আবার ভাল ভাল গল্পে ছবি নির্মাণ শুরু হয়েছে। তাই আবারো চলচ্চিত্রে নিয়মিত কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আর এই ছবিটির সম্বন্ধে বলতে গেলে প্রথমে পরিচালকের কথা বলতে হয়। সেদিক থেকে বলবো বন্ধন ভাই নতুন পরিচালক। আর এখনকার নতুনেরা অনেক মেধাবী। বন্ধন ভাইও আমি মনে করি তারই একজন। ‘শুন্য’র গল্প শুনে অনেক ভাল লেগেছে। ছবিটিতে অভিনয় করার একটা স্থান আছে বলে আমার মনে হয়েছে। যার কারণে ছবিটিতে অভিনয়ের জন্য রাজি হয়েছি। আশা করছি দর্শকদেরও অনেক ভাল লাগবে এবং ছবিটির মাধ্যমে আগের সেই রেসিকে ফিরে পাবে। কারণ আমি আগে যে ধরনের গল্পে অভিনয় করেছি এই ছবিতেও আমাকে দর্শক ওই ধরনের একটি গল্পেই দেখতে পাবেন। এখনি ছবির পুরো গল্পটা বলতে চাই না। পুরো গল্পটা হলে গিয়ে দেখবেন। এখন শুধু এটুকুই বলবো, ছবিটিতে আমার স্বামীর চরিত্রে দেখা যাবে ওমর সানী ভাইকে।
আপনাকে চলচ্চিত্রের পাশাপাশি অসংখ্য বিজ্ঞাপনেও কাজ করতে দেখা গেছে। এমন কি এ সপ্তাহে আপনি একটি বিজ্ঞাপনে কাজ করেছেন।
বিজ্ঞাপনের ব্যাপারে অবশ্য আমি কখনোই না করিনি। মানসম্মত এবং ভাল কোম্পানির বিজ্ঞাপন হলে আগাগোড়াই কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও কাজ করতে চাই। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার সকালে এফডিসিতে প্রাণ আর এফ এল গ্রুপের একটি প্লাস্টিকের বিজ্ঞাপন করছি। আজ একদিন শুটিং শেষে ঈদের পর আউটডোরে আবারো বিজ্ঞাপনটিতে দুইদিন শুটিং করবো।
এখন আপনি সানী ভাইয়ের বিপরীতে কাজ করছেন?
হ্যা, ছবিটিতে আমার সহশিল্পী হিসেবে কাজ করবেন ওমর সানী ভাই। এটা আমার ওনার সঙ্গে দ্বিতীয় ছবি। এর আগে মুশফিকুর রহমান গুলজার ভাইয়ের পরিচালনায় অনুদানের ছবি ‘লাল সবুজের সুর’-এ চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। ছবিটির শুটিংও শুরু হয়েছে। কিন্তু এখনও আমি কাজ করিনি। কিছুদিনের মধ্যেই করবো। আর সানী ভাইয়ের ব্যাপারে বলতে গেলে আমার ছোটবেলা থেকে শুরু করতে হবে। সানী ভাই যখন অভিনয়ে এসেছেন, আমি তখন অনেক ছোট ছিলাম। তার অভিনয় অনেক দেখেছি। বলতে পারেন আমি তার একজন ভক্তও বটে। এখন তার সঙ্গে অভিনয় করতে পেরে অনেক ভাল লাগছে।
নিজেকে তৈরি করছেন বলতে কি বোঝাচ্ছেন! জিমে ভর্তি হয়েছেন কি বা অন্য কিছু?
বিয়ের পর আবারো পর্দায় ফেরা, শারীরিক একটা প্রস্তুতি তো নিতে হয়ই। কিন্তু ইচ্ছা থাকলেও এখন জিম অথবা অন্য কিছু করতে পারছি না। কারণ আমার একটা বেবী হয়েছে। বেবীটা প্রি-ম্যাচিউরড। আট মাসে হয়েছে। যে কারণে বাচ্চাকে আলাদা একটা টেক কেয়ার করতে হয়। ডাক্তারের পরার্মশে জিম অথবা ডায়েট করতে পারছি না। এগুলো করলে আমার বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে। তো বুঝতেই পারছেন মেয়েদের ফাস্ট প্রায়োরিটি কিন্তু তার সংসার এবং বাচ্চা। এর পরে অন্যান্য সবকিছু। এর মানে আমি কিন্তু বলছি না যে, মিডিয়া আমার কাছে কম গুরুত্বের। আমার বাচ্চা আর একটু বড় হলে নিজের ফিটনেসের দিকে কেয়ার করবো।
কোন ধরনের ছবিতে আবার দর্শক রেসিকে দেখতে পাবে?
আমি আগেই বলেছি, আমার অভিনয়ের স্কোপ যে গল্পে মনে করবো আছে, আমি সেটাতেই অভিনয় করবো। আশা করি দর্শক রেসিকে আগের ছবিগুলোর মতো গল্পে দেখতে পাবে।
সহশিল্পী হিসেবে শাকিব খান, মান্না, ফেরদৌস, ইমন, নিরব, ডিপজলসহ ইন্ডাস্ট্রির বড় বড় অনেক নায়কের সঙ্গে আপনাকে দেখা গেছে। এখনকার নায়কদের সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা আছে কি?
অবশ্যই। কেন নয়? ভাল গল্প এবং ভাল ছবির প্রয়োজনে যদি এখনকার নতুন হিরোদের সঙ্গে আমাকে নির্মাতারা পছন্দ করেন, তাহলে অবশ্যই দর্শক আমাকে নতুনদের বিপরীতে দেখতে পাবে। আপনারা আমার ক্যরিয়ারের একটু পেছনে তাকালেই কিন্তু এ বিষয়ে ক্লিয়ার হবেন। কারণ ডিপজল ভাই এবং আমার বয়সের ডিফারেন্স কিন্তু কম ছিল না। তারপরও কিন্তু দর্শক আমাদেরকে ভাল ভাবেই গ্রহণ করেছেন। তাই বলবো এখনকার নতুন নায়কদের সঙ্গেও আমার অভিনয় করতে দ্বিধা নেই। গল্পের প্রয়োজনে যদি নতুনদের বিপরীতে অভিনয় করা লাগে আমি করতে প্রস্তুত। এছাড়াও আমাদের পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকালেও কিন্তু আপনি দেখতে পাবেন নতুন পুরাতন, বয়স্ক-কমবয়সী কোনো কথা নেই। মাধুরী কিন্তু এখনো নায়িকার চরিত্রে অনেক নতুনদের সঙ্গে অভিনয় করছেন। এটা আসলে গল্পের ডিমান্ড।
আপনাকে এককভাবে ডিপজল সাহেবের সঙ্গে দেখা গেছে অনেক দিন। আপনার কি মনে হয় না ডিপজল সাহেবের সঙ্গে এককভাবে কাজ না করে অন্য কোনো নায়কের সঙ্গে কাজ করলে ক্যারিয়ারে আরো ভাল হতো?
আমি আপনাদেরকে বলি এক শাকিব খান ছাড়া কার সাথে কাজ করতাম? শাকিবের ছবি ছাড়া আর কার ছবি চলে? আশা করি উত্তরটা পেয়েছেন।
দীর্ঘদিন পর চলচ্চিত্রে ফিরেছেন। নিয়মিত হচ্ছেন কি?
অবশ্যই। অভিনয়টা রক্তে মিশে গেছে। এটা থেকে দূরে থাকতে চাইলেও থাকা সম্ভব নয়। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ভাল ছবিতে অভিনয় করে চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শকদেরকে বিনোদিত করতে চাই এবং দর্শকদের ভালবাসা পেতে চাই। বিয়ের আগে চিন্তা করতাম বিয়ের পরে অভিনয়ের সুযোগ পাবো কিনা? অভিনয় ছাড়া থাকতে পারবো কিনা? যেমন আপনারা সাংবাদিকতা করেন। লেখালেখি ছাড়া কিন্তু আপনাদের ভাল লাগবে না। আমারো এটাই হয়েছে। অভিনয় ছেড়ে কখনো থাকা সম্ভব না।
চলচ্চিত্রে যারা কাজ করেছেন তারা দিন দিন নাটক বা টেলিফিল্মের দিকে ঝুঁকছেন। আপনার এরকম কোনো ইচ্ছা আছে কি?
আমি গত আট নয় বছর ধরে টেলিভিশনে কাজ করিনি। এর আগে টেলিফিল্মেও কাজ করেছি। এখন আবার বিজ্ঞাপনে কাজ করছি। এছাড়াও আমার ইচ্ছা অভিনয়ে যেহেতু ব্যাক করেছি মিডিয়ার সব মাধ্যমেই কাজ করার। কারণ টেলিভিশনের দর্শককেরাও কিন্তু রেসিকে কম ভালবাসেন না। তাদের জন্য হলেও ভাল কিছু কাজ করা উচিত। এই দায়িত্ব থেকে হলেও বেছে বেছে ভাল কিছু কাজ করবো বিশেষ বিশেষ দিনে।
বিয়ের আগের মিডিয়া জীবন এবং পরের জীবনের মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর দিতে গেলে সবাই অবাক হবেন। কারণ সবাই যেটা বলে আমি তার উল্টো বলবো। বিয়ের আগে পরাধীনভাবে কাজ করেছি। এখন স্বাধীন। বিয়ের আগে অনেক কিছু মেনে এবং প্রতিটা পা ফেলার আগে অনেক কিছুই ভেবে চিন্তে ফেলা লেগেছে। কিন্তু এখন সেটা ফেলতে হচ্ছে না। কারণ আমার স্বামী আমাকে হান্ড্রেড পারসেন্ট সার্পোট দেয় সব কাজে। এমনকি তিনি আমার সঙ্গে থাকে সবসময় এবং আমার অনেক কেয়ার করে।
কোন কোন বিষয়ের দিকে লক্ষ রেখে একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন?
আগাগোড়াই আমার এই অভ্যাসটা নেই যে, ছবিটাতে আমি প্রধান নায়িকা কিনা? নায়কের সঙ্গে কতোটুকু সময় আমি পর্দায় থাকতে পারবো। এমন কোনো বদঅভ্যাসই আমার ছিল না এবং এখনো নেই। আমি প্রথমে ছবিটার গল্প শুনি। এরপর ভাবি এই চরিত্রে আমার অভিনয় দেখে দর্শকদের কতোটুকু ভাল লাগবে। আমি চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলতে পারবো কিনা। যদি নিজের মনে পজিটিভ উত্তর আসে তাহলেই চুক্তি স্বাক্ষর করি। সেটা হোক নায়িকা অথবা অন্য কোনো ক্যারেক্টার।
এক সপ্তাহ পর ঈদ। ঈদে কি করবেন, ঈদ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা কি?
এবার ঈদ ঢাকাতেই করবো। ঈদের শপিং এখনো করা হয়নি। এখন কাজ নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় পার করছি। গত পরশু একটি বিজ্ঞাপনের কাজ করলাম। আজ আরেকটি বিজ্ঞাপনের কাজ করছি। ঈদের জন্য বিভিন্ন টেলিভিশনে নাচ এবং অন্যান্য কিছু প্রোগ্রাম করলাম। এছাড়াও ঈদের কিছু প্রোগ্রামে অংশ নিতে দেশের বাইরে যেতে হবে। সবমিলিয়ে অনেক ব্যস্ত রয়েছি। আর তার চেয়েও বড় কথা হলো এই ঈদটা গরীব-দুঃখী মানুষদের পাশে থাকার ঈদ। তাই সেরকম কিছু ইচ্ছা রয়েছে।
দর্শকদের উদ্দেশে কি বলবেন?
দর্শকদেরকে ঈদের অগ্রিম শুভেচ্ছা রইলো। সবার জন্য দোয়া রইলো। সবাই আপনজনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন সেই কামনাই করি। সেই সাথে আরেকটি কথা না বললেই নয়। কোরবানীর ঈদটা আসলে ত্যাগের ঈদ। গরীব-দুঃখী মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দটা সমানভাবে ভাগ করবেন। অবশেষে বলবো আমার জন্য এবং আমার পরিবারের জন্য সবাই দোয়া করবেন। যেন বরাবরের মতো ভাল ভাল চলচ্চিত্র আপনাদেরকে উপহার দিতে পারি।
No comments
https://web.facebook.com/Newprojapotibd/